রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নেয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ভোটের উত্তাপে বেশ ভাটা পড়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার পরই সরকারি কৌশলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-২ আসনের এমপি উকিল আব্দুস সাত্তারের মতো দলছুট বিএনপি নেতাদের অংশগ্রহণে সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ধরনের জোরালো আলোচনা ছিল। কিন্তু গতকাল সিলেট সিটির টানা দুইবারের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় সেটাও হচ্ছে না। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবর্তে সহজ জয়ের দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয় প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে জয় লাভই আমাদের লক্ষ্য থাকে। পাঁচ সিটিতেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। বিগত দিনে সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনে পাঁচ সিটির মানুষ খুশি। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হবে।
পাঁচ সিটির মধ্যে এ মাসের ২৫ তারিখে গাজীপুরের নির্বাচন হবে। ওই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আজমত উল্যাহ খান। আজমত উল্যাহ খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বন্দ্বও দীর্ঘদিনের। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম। শেষমেষ ঋণখেলাপির দায়ে সেটাও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তার মায়ের মনোনয়ন। জানা গেছে, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার মায়ের পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করলেও নানামুখী চাপে বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। এদিকে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য ২৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় একটি সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। যুবলীগও নির্বাচনী প্রচারণার জন্য পৃথক টিম গঠন করে জোরালোভাবে মাঠে কাজ করছে। তাছাড়া বিএনপি কিংবা তাদের হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
খুলনা ও বরিশাল সিটিতে আগামী ১২ জুন নির্বাচন হবে। খুলনায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বিএনপি কিংবা তাদের হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বেশ খোশমেজাজে রয়েছেন বর্তমান মেয়র তালুদকার আব্দুল খালেক। আর বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে পরিবর্তন করে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর পরিবর্তে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে। জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর নানা কোন্দল প্রকাশ পাওয়ায় এ সিটির জয়লাভ করা নিয়ে শুরুতেই চিন্তিত ছিল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে সেই কোন্দলের বরফ গলতে শুরু করেছে। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী না থাকায় শেষমেষ বরিশাল সিটিতেও খুলনার মতো সহজ জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় রাজশাহী সিটিতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সহজ জয় পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে সিলেটে টানা দুইবারের বিএনপি সমর্থিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অংশ নিলে নতুন প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হতো। কিন্তু গতকাল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। যার ফলে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো শক্ত প্রার্থীর মুখে পড়তে হচ্ছে না আওয়ামী লীগের প্রার্থীর। স্থানীয় সূত্র বলছে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অংশ না নেয়ায় সিলেট সিটিতে এবার আওয়ামী লীগ সহজ জয়ের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।
পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলীয় প্রার্থীর বিজয় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গতকাল বলেন, গত ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ টানা সরকারে রয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে দেশের এবং দেশের মানুষের যে উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে সেটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা আশা করছি সিটি নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবে। অতীতের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করব। এক প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, বিএনপি অংশ না নিলেও আমরা সিটি নির্বাচনকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। সিটি নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পুরোদমে কাজ করছি।